বার্তা সংস্থা ইকনা: সৌদি আরবে মানবতার জবাই অর্থাৎ এই নিষ্পাপ শিশুকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে। যাকারিয়া এবং তার মা সৌদি আরবের শিয়া অধ্যুষিত “আহসা” প্রদেশের নাগরিক। তারা শান্তির নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)এর পবিত্র মাযার জিয়ারতের জন্য মদিনায় যাচ্ছিলেন। যাকারিয়া ও তার মা গাড়িতে ওঠার পর «بسم الله الرحمن الرحیم» বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পাঠ করে হযরত মুহাম্মাদ (সা.)এর নমে দরুদ পাঠ করেন। এই বিষয়টি ড্রাইভার খেয়াল করে এবং তাকে জিজ্ঞাসা করে: তুমি কি শিয়া? যাকারিয়ার মায়ের নিকট হতে হ্যাবাচক উত্তর শুনে রাগান্বিত হয়ে একটি কফি হাউসের নিকটে গাড়ি থামিয়ে জোরপূর্বক শিশুটিকে তার মায়ের নিকট হতে আলাদা করে। এমতাবস্থায় শিশুটির মা চিৎকার করে। এদিকে ড্রাইভার তাড়াহুড়া করে গাড়ি কাচ ভেঙ্গে, সেই ভাঙ্গা কাচ দিয়ে নিষ্পাপ শিশুটিকে গলা কেটে হত্যা করে। এই মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে যাকারিয়া মা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মিডিয়া ভিন্ন ভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করেছে। তবে সকল মিডিয়া একটি বিষয়ে একমত পোষণ করেছে। সেটি হচ্ছে সৌদি ড্রাইভার নিষ্পাপ শিশুটিকে গলা কেটে হত্যা করেছে।
অপর দিক থেকে সৌদি মিডিয়া বিষয়টিকে অন্য দিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। সৌদি আরবের ওয়াহাবি ও দায়েশী মূলক কর্মকাণ্ড ঢাকার জন্য তার এ ব্যাপারে পর্যবেক্ষণ করে ড্রাইভারকে মানসিক রোগী হিসেবে সাব্যস্ত করেছে। সৌদি আরবের এধরণের ফলাফলের প্রতিবাদ জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা ঘোষণা করেছে, হত্যাকারীকে মানসিক রোগী হিসেবে পরিচয় করানো সম্পূর্ণ রূপে অযৌক্তিক। কারণ সে একজন ড্রাইভার এবং সৌদি কর্তৃপক্ষের নিকট হতে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়েছে। এই ব্যাপারটি তার মানসিক ও স্বাস্থ্যগত সুস্থতার প্রমাণের জন্য যথেষ্ট। সুতরাং ওয়াহাবি চিন্তাধারা যা দায়েশের (আইএস) চিন্তাধারা থেকে কোন প্রকার ভিন্ন নয় এবং এটি সম্পূর্ণরূপে অমানবিক একটি কাজ।
এধরণের ভয়ানক অপরাধ পরের সম্পূর্ণরূপে নিশ্চুপ রয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার রক্ষাকর্মী সংস্থাসমূহ। তবে বিশ্বব্যাপী সামাজিক নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেক ছবি আপলোড করে বেশ কয়েকটি হ্যাশট্যাগ চালু করেছে।
এ ব্যাপারে কুরআন কি বলে?
এ ঘটনাটি একটি আরব ও মুসলিম দেশে সংগঠিত হয়েছে। যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতি বছর জিয়ারত ও হজ করতে লাখ লাখ মুসলমান ভ্রমণ করেন। পবিত্র কুরআনের আয়াত ও নবী করিম (সা.)এর হাদিস অনুযায়ী মানুষ হত্যা করা হারাম। এ ব্যাপারে সূরা নিসার ৯৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:
وَمَنْ يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُتَعَمِّدًا فَجَزَاؤُهُ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيهَا وَغَضِبَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهُ وَأَعَدَّ لَهُ عَذَابًا عَظِيمًا
এবং যে ব্যক্তি কোন বিশ্বাসীকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করে, তার সাজা হল জাহান্নাম, যাতে সে চিরকাল থাকবে এবং আল্লাহ তার ওপর ক্রোধান্বিত হন এবং তার ওপর অভিসম্পাত বর্ষণ করেন এবং তার জন্য মহাশাস্তিও প্রস্তুত করে রেখেছেন।
নবী (সা.)এর হাদিসে হত্যার প্রতিফল
শান্তির নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন:
لَا تَرْجِعُوا بَعْدِي كُفَّارًا يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْض
আমার (ওফাতের) পরে কাফেরে ফিরে যেয় না এবং একে অপরকে হত্যা করো না।
হযরত মুহাম্মাদ (সা.) অপর এক হাদিসে বলেছেন:
كُلُّ ذَنْبٍ عَسَى الله أَنْ يَغْفِرَهُ إلا الرَّجُلَ يَمُوتُ مُشْرِكاً أَوْ يَقْتُل مُؤْمِناً مُتَعَمِّداً
মহান আল্লাহ সকল গুনাহ মাফ করবেন, শুধুমাত্র যারা কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে অথবা (একজন) মুসলমানকে হত্যা করবে। iqna