IQNA

মায়ের সেবায় জগদ্বিখ্যাত উয়াইস কারনি

18:27 - August 30, 2021
সংবাদ: 3470586
তেহরান (ইকনা): মহানবী (সা.)-এর জীবদ্দশায় ইসলাম গ্রহণকারী তাবেঈ উয়াইস আল কারনি (রহ.)। যাকে মহানবী (সা.) শ্রেষ্ঠ তাবেঈ বলে ঘোষণা করেছেন।

কী গুণের কারণে মহানবী (সা.) লোকটিকে স্বচক্ষে না দেখেই শ্রেষ্ঠ তাবেঈ বলে ঘোষণা করলেন? কী এমন ঘটনা—তাঁকে এমন ইতিহাসের সম্মানজনক মসনদে বসিয়ে দিয়েছে? সে বিষয়েই আজ জানার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।

আবু উমর উয়াইস ইবনে আমের ইবনে জুস ইবনে মালেক আল কারনি আল মুরাদি আল ইয়েমেনি। তিনি ছিলেন প্রসিদ্ধ একজন দুনিয়াবিমুখ আবেদ। বিশিষ্ট এই আল্লাহভীরু তাবেঈ রাসুল (সা.)-এর যুগে ইসলাম গ্রহণ করেও প্রিয় নবীর সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। তাঁর বৃদ্ধা মায়ের খেদমত করতে গিয়ে প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তিনি প্রিয় নবী (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেননি। যার কারণে নবীজির যুগে ইসলাম গ্রহণ করেও তিনি সাহাবি হতে পারেননি। তাঁর ব্যাপারে ইমাম জাহবি ‘সিয়ারু আলামিন নুবালা’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘দুনিয়াবিমুখ এই মনীষী তাঁর যুগের তাবেঈনদের সরদার ছিলেন। তিনি ছিলেন মুত্তাকি, আল্লাহর অলি ও একনিষ্ঠ বান্দা।’

উয়াইস আল কারনি (রহ.) এমন এক তাবেঈ ছিলেন যে তাকে অনেক বড় বড় সাহাবি না দেখেই চিনতেন। কারণ তাঁরা মহানবী (সা.)-এর কাছে তাঁর নাম শুনেছেন। এ কারণেই ইমাম মুসলিম তাঁর মর্যাদা সম্পর্কে শরহে মুসলিমের মধ্যে একটি অধ্যায় নির্ধারণ করেছেন। তাতে তাঁর সম্পর্কে তিনি বিভিন্ন হাদিস উল্লেখ করেছেন। উমর ইবনুল খাত্তাব বলেন, আমি মহানবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘অবশ্যই তাবেঈনদের মধ্যে সে লোক শ্রেষ্ঠ যে ‘উয়াইস’ নামে খ্যাত। তার একমাত্র মা আছেন এবং তার কুষ্ঠরোগ হয়েছিল। তোমরা তার কাছে অনুরোধ করবে যেন সে তোমাদের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করে। (মুসলিম, হাদিস : ৬৩৮৫)

এ কারণেই উমর ইয়েমেনের কোনো সাহায্যকারী দল এলে তাদের মধ্যে উয়াইস আল কারনিকে খুঁজে বেড়াতেন। উসাইর ইবনে জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, উমর ইবনুল খাত্তাবের অভ্যাস ছিল, যখন ইয়েমেনের কোনো সাহায্যকারী ফৌজ তাঁর কাছে আসত তখন তিনি তাঁদের প্রশ্ন করতেন, তোমাদের মধ্যে কি উয়াইস ইবনু আমির আছে? পরিশেষে তিনি উয়াইসকে পান। তখন তিনি বলেন, তুমি কি উয়াইস ইবনু আমির? তিনি (উয়াইস) বলেন, হ্যাঁ। তিনি প্রশ্ন করেন, মুরাদ গোষ্ঠীর কারান গোত্রের? তিনি বলেন, হ্যাঁ। জানতে চাইলেন, তোমার কি কুষ্ঠরোগ হয়েছিল এবং তা নিরাময় হয়েছে—শুধু এক দিরহাম জায়গা ছাড়া? তিনি বলেন, হ্যাঁ। প্রশ্ন করেন, তোমার মা আছেন কি? তিনি বলেন, হ্যাঁ। তখন উমর বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘তোমাদের কাছে মুরাদ গোষ্ঠীর কারান বংশের উয়াইস ইবনে আমির ইয়েমেনের সাহায্যকারী দলের সঙ্গে আসবে। তার কুষ্ঠরোগ ছিল। পরে সে সুস্থ হয়ে গেছে। শুধু এক দিরহাম ছাড়া। তার মা রয়েছেন। সে তাঁর প্রতি অতি সেবাপরায়ণ। এমন লোক আল্লাহর ওপর শপথ করে নিলে আল্লাহ তা পূর্ণ করে দেন। সুতরাং তুমি যদি তোমার জন্য তাঁর কাছে মাগফিরাতের দোয়া প্রার্থনার সুযোগ পাও তাহলে তা করবে। কাজেই আপনি আমার জন্য মাগফিরাতের দোয়া কামনা করুন। তখন উয়াইস (রা.) তাঁর মাগফিরাতের জন্য দোয়া প্রার্থনা করেন। (মুসলিম, হাদিস : ৬৩৮৬)

উমর ইবনুল খাত্তাব তাঁকে একটি চাদর হাদিয়া দেন। অনেকের মতে, ওই চাদরটি ছিল উয়াইস আল কারনি (রহ.)-এর জন্য প্রিয় নবী (সা.)-এর রেখে যাওয়া চাদর, যা বর্তমানে তুরস্কের ইস্তাম্বুলের খিরকা শরিফ মসজিদে সংরক্ষিত আছে। (তুর্ক-নাও ডটকম)

উয়াইস ইবেন আমের (রহ.) ছিলেন মূলত ইয়েমেনের বাসিন্দা। কিন্তু তিনি পরবর্তী সময়ে কুফায় চলে যান এবং সিফফিনের যুদ্ধে আলী (আ.)-এর সঙ্গী ছিলেন। ইমাম আলী (আ.)এর সাথে ক্ষমতাপিপাসু মুয়াবিয়ার সাথে ওই যুদ্ধে মুয়াবিয়ার সৈন্যদলের হাতে মহান এই তাবেঈ শাহাদাত বরণ করেন।

captcha