IQNA

ইসলামে সেজদার গুরুত্ব ও ফজিলত

17:19 - August 03, 2018
সংবাদ: 2606363
পবিত্র ইসলামের দৃষ্টিতে মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে সেজদা করা সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতসমূহের অন্তর্ভুক্ত। রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, মানুষ অন্য যে কোন অবস্থা অপেক্ষা সেজদাবনত অবস্থাতে আল্লাহর তায়ালার নিকটতম। মহামানবগণ বিশেষত: রাসূলুল্লাহ (সা.) ও আহলে বাইতের পবিত্র ইমামগণ (আ.) দীর্ঘ সময় সেজদাবনত থাকতেন। সর্বশক্তিমান আল্লাহর উদ্দেশ্যে দীর্ঘ সেজদা মানুষের মন ও আত্মাকে প্রশান্ত করে।

ইসলামে সেজদার গুরুত্ব ও ফজিলত
বার্তা সংস্থা ইকনা: সেজদা প্রতিপালকের দরবারে বন্দেগী ও উপাসনার সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম হিসেবে পরিগণিত। আর এ কারণেই হয়তো প্রতি এক রাকাত নামাযে দু’টি সেজদা আদায়ের আদেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন সূরাতে ওয়াজীব ও মুস্তাহাব সেজদাসমূহ এ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত বহন করে।

মানুষ সেজদাবনত অবস্থায় একমাত্র আল্লাহ ছাড়া সব কিছুকে ভুলে যায়। নিজেকে এ মহান সত্ত্বার নিকট সমর্পণ করে এবং তারই নৈকট্যপ্রাপ্ত হয়।

আরেফ, সাধক এবং আধ্যাত্মিক শিক্ষকেরা সেজদার উপর অপরিসীম গুরুত্বারোপ করেছেন।

উপরোক্ত আলোচনা একটি প্রসিদ্ধ হাদীসের প্রতি আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। হাদীসটিতে বর্ণিত হয়েছে যে, সেজদার ন্যায় মানুষের কোন কাজই শয়তানকে অধিক ব্যথিত করে না। অপর একটি হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর এক ঘনিষ্ঠ সাহাবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

“যদি চাও কিয়ামতের মহান আল্লাহ তোমাকে আমার সাথে একত্রিত করেন, তাহলে মহামহিম ও অদ্বিতীয় আল্লাহর উদ্দেশ্য সেজদাকে দীর্ঘায়িত কর।”

একমাত্র আল্লাহ ব্যতিত অন্য কারও জন্য সেজদা জায়েয নয়

আমরা সুদৃঢ় আকিদা পোষণ করি যে, সেজদা শুধুমাত্র এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর সত্তা ব্যতিত অন্য কারও জন্য মোটেও জায়েয নয়। কেননা সেজদা বন্দেগী ও উপাসনার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। আর উপাসনা বা ইবাদত একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্য নির্ধারিত।

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে,

“আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে সেজদাবনত হয়।” আরবী ব্যাকরণের নিয়ম অনুযায়ী এ আয়াতে ‘আল্লাহ’ শব্দটি বাক্যের শুরুতে বর্ণিত হওয়াতে তা ‘হাস্র’ বা ‘শুধুমাত্র’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ সেজদা শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত।

এছাড়া সূরা আরাফের ২০৬ নং আয়াতে বর্ণিত (له یسجدون (শব্দটি অনুরূপ অর্থের প্রতি ইঙ্গিত বহন করে।

বস্তুতঃ সেজদা বিনয়ের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ যা শুধুমাত্র বিশ্বস্রষ্টার জন্য নির্ধারিত। যদি অন্য কোন ব্যক্তি বা বস্তুর জন্য সেজদা করা হয়। তাহলে তাকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করা হবে যা আদৌ সঠিক নয় এবং শিরক হিসেবে পরিগণিত।

তওহীদ বা একত্ববাদের অন্যতম অর্থ হচ্ছে ইবাদতের ক্ষেত্রে একত্ববাদের বিশ্বাস। অর্থাৎ ইবাদত কেবলমাত্র এক ও অদ্বিতীয় প্রতিপালকের জন্য প্রযোজ্য। আর এ বিশ্বাস ছাড়া একত্ববাদের অর্থ পরিপূর্ণতা লাভ করবে না। অন্যভাবে বলা যায়: আল্লাহ ব্যতিত অন্য কারও উপাসনা শিরকের পরিচয়। আর সেজদা হচ্ছে উপাসনার সর্বোত্তম রূপ। সতরাং সেজদা একমাত্র আল্লাহ ব্যতিত অন্য কারও জন্য আদৌ জায়েয নয়।

কিন্তু হযরত আদমের (আ.) জন্য ফেরেশতারা যে সেজদা (যা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে বর্ণিত হয়েছে) করেছে, তা খ্যাতনামা মুফাসসীরগণের বর্ণনানুসারে সম্মানসূচক সেজদা হিসেবে পরিগণিত। অর্থাৎ এ সেজদা হযরত আদমের (আ.) প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য করা হয়েছে, তাকে উপাসনার উদ্দেশ্যে নয়। যেহেতু স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা এ সেজদা’র আদেশদাতা ছিলেন, সেহেতু তার নিদের্শ পালন কিংবা আনুগত্য প্রকাশের নিমিত্তে ফেরেশতাবর্গ সেজদা করেছেন। এ ধরনের সেজদাকে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা পোষণের সেজদাও বলা যেতে পারে।

অনুরূপভাবে হযরত ইউসূফের (আ.) উদ্দেশ্যে হযরত ইয়াকুব (আ.), তার স্ত্রী ও সন্তানবর্গের সেজদা ও একই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে,

“তারা সবাই তার (ইউসূফের) সামনে সেজদাবনত হলেন।” অর্থাৎ এ ধরনের সেজদাও সম্মান প্রদর্শনের নিমিত্তে কিংবা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে শিয়া মাযহাবে অন্যতম প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থ “ওসায়েলুশ শিয়া”-তে নামাযের সেজদা অধ্যায়ে ‘আল্লাহ ব্যতিত অন্য কারও জন্য সেজদা জায়েয নয়’ শীর্ষক একটি শিরোনাম রয়েছে। সেখানে রাসূলুল্লাহ (সা.) ও মাসুম ইমামগণ (আ.) হতে সাতটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

captcha