IQNA

কুরআনের সূরাসমূহ/১৫

সূরা হিজর; মানুষ সৃষ্টির গল্প এবং শয়তানের শত্রুতার শুরু

16:52 - July 03, 2022
সংবাদ: 3472081
তেহরান (ইকনা): বিশেষজ্ঞগণ মানুষ সৃষ্টি সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণা ও তত্ত্ব প্রকাশ করেছেন। এ ব্যাপারে ইসলামেরও নিজস্ব তত্ত্ব রয়েছে, যা পবিত্র কুরআনে উল্লেখ আছে। মানুষ সৃষ্টির পর এই সৃষ্টি জগতে মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হল শয়তান ও তার প্রলোভনের মোকাবিলা করা।
পবিত্র কুরআনের ১৫তম সূরার নাম ‘হিজর’। এই সূরাটিতে মোট ৯৯টি আয়াত রয়েছে এবং এটি কোরানের ১৪তম পারায় স্থান পেয়েছে। মাক্কী সূরাসমূহের মধ্যে এই সূরাটি একটি। নাযিলের ক্রমানুসারে এই সূরটি ৫৪তম সূরা যা প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)এর উপর নাযিল হয়েছে।
 
এই সূরাটি “হিজর” নামে নামকরণের কারণ হল হযরত সালেহ (আ.) এর কউম অর্থাৎ এই সূরার ৮০ থেকে ৮৪ নম্বর আয়াতে উল্লেখিত সামুদ জাতি, যারা “হিজর” নামক দেশে থাকত এবং ঐ দেশে থাকার কারণে তাদের হিজরের অধিবাসী বলা হতো। হযরত সালেহ (আ.) আরবের নবীদের একজন এবং নূহের পুত্র শেমের বংশধরদের একজন। পবিত্র কুরআনে নবী সালেহের (আ.) নাম মোট ৯ বার উল্লেখ করা হয়েছে।
 
সূরা হিজরে মহাবিশ্বের সূচনা এবং কিয়ামতের আলামত, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, পবিত্র কুরআনের গুরুত্ব ও মহত্ত্ব এবং অন্যায়কারীদের শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই সূরায় হযরত আদম (আ.)এর সৃষ্টির কাহিনী, ইবলিস ব্যতীত তাকে ফেরেশতাদের সিজদা করার কাহিনী, ইবরাহীমকে (আ.) ফেরেশতাদের সুসংবাদ প্রদানের কাহিনী, লূত (আ.)এর গোত্রদের জঘন্য আচরণের কারণে তাদের উপর বর্ষিত আযাবের কাহিনী এবং সামুদ সম্প্রদায়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
 
এই সূরার একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল সৃষ্টি সম্পর্কিত আয়াত। ২৬ থেকে ৪৩ নম্বর আয়াতে মানুষ ও জ্বীন সৃষ্টির কাহিনী এবং এই দুই দলের সৃষ্টির ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে এবং ফেরেশতাদের আল্লাহর আদেশের প্রতি আনুগত্য এবং শয়তানের অবাধ্যতার কথা উল্লেখ করে তাকে বিতাড়িত করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
 
আদম (আ.)এর সৃষ্টি এবং ইবলিসের বিদ্রোহ এবং তার পরিণতির কাহিনী সকল মানুষের জন্য একটি সতর্কবাণী; কারণ ইবলিস মানুষের কারণে মহান আল্লাহ দরবার থেকে বিতাড়িত হয়েছিল, কিন্তু বিতাড়িত হওয়ার আগে সে মহান আল্লাহর নিকটে মানুষকে বিভ্রান্ত কারার সুযোগ চেয়েছে। এই সুযোগ তাকে দেওয়া হয় এবং ইবলিস আল্লাহর খলেস বান্দা (নবী, রাসূল ও ইমামগণ) ছাড়া মানুষকে বিভ্রান্ত করার শপথ করে।
 
অবশ্য, এটা এমন নয় যে, শয়তানের ফাঁদে পা দেওয়া ছাড়া মানুষের কোনো উপায় নেই; সূরা হিজরে আল্লাহ মানুষকে দুটি উপায়ের কথা বলেছেন, যেগুলো সে তার নিজের ইচ্ছায় বেছে নেয়। এই দুটি উপায়ের একটি হল: যারা শয়তানের ধোঁকায় পা দেন না এবং শয়তানের প্রলোভনে নিজেদের নিমজ্জিত করে না, তাদের জন্য মহান আল্লাহ বলেছেন: 
 
إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ؛ ادْخُلُوهَا بِسَلَامٍ آمِنِينَ
 
নিশ্চয় আত্মসংযমীরা (বেহেশতের) উদ্যানসমূহে ও ঝরনাসমূহে থাকবে।  (তাদের বলা হবে,) ‘শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে তাতে প্রবেশ কর।’ 
সূরা হিজর, আয়াত ৪৫ ও ৪৬। 
 
অপরটি হলো যারা শয়তানকে অনুসরণ করে: 
 
وَإِنَّ جَهَنَّمَ لَمَوْعِدُهُمْ أَجْمَعِينَ
 
এবং নিশ্চয় তাদের সকলের জন্য (অন্তিম) প্রতিশ্রুতস্থল জাহান্নাম।
সূরা হিজর, আয়াত ৪৩।
 
সংশ্লিষ্ট খবর
captcha