IQNA

মাওলানার মাযার, ইসলামী আর্কিটেকচার হাউস, সংস্কৃতি ও সাহিত্য

জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি (১২০৭ – ১৭ডিসেম্বর ১২৭৩), অথবা পরিচিত আছেন জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ বালখী, মাওলানা রুমি, মৌলভি রুমি নামে। তবে, শুধু মাত্র রুমি নামে বেশি জনপ্রিয়। তিনি ছিলেন ১৩ শতকের একজন ফার্সি মুসলিম কবি, আইনজ্ঞ, ইসলামি ব্যক্তিত্ব, ধর্মতাত্ত্বিক, অতীন্দ্রিবাদী এবং সুফী। রুমির প্রভাব দেশের সীমানা এবং জাতিগত পরিমণ্ডল ছাড়িয়ে বিশ্বদরবারে ছড়িয়ে পড়েছে; ফার্সি, তাজাকিস্তানী, তুর্কি, গ্রীক, পাস্তুন, মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার মুসলমানরা গত সাত দশক ধরে বেশ ভালভাবেই তার আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারকে যথাযথভাবে সমাদৃত করে আসছে।

জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ বালখী ১৩ শতকের বালখ শহরে জন্মগ্রহণ করেছেন। শৈশবেই তিনি সমরকন্দ শহরে সফর করেন এবং সেখানেই তিনি স্থায়ী হন। কিছু দিন অতিবাহিত না হতেই তিনি এই শহর ত্যাগ করে কোনিয়া’য় (বর্তমান তুরস্কের একটি শহর) যান।
রুমির কবিতা সবই প্রশংসিত এবং এই বিখ্যাত ইরানী কবির কবিতায় পবিত্র কুরআনের সুন্দর রূপকথার রয়েছে। তার লেখা মসনবী কে ফার্সি ভাষায় লেখা সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ হিসাবে তুলনা করা হয়।
১২৭৩ সালের ডিসেম্বর এ রুমি অসুস্থবোধ করতে লাগলেন। তিনি তার নিজের মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন এবং অনেক জনপ্রিয় হওয়া একটি গজল রচনা করেন যার শুরু হয়ঃ
কিভাবে জানব কোন ধরণের রাজা আমার মধ্যে আছে আমার সহচর হিসাবে?
আমার উজ্জ্বল মুখে দৃষ্টি দিও না আমার বদ্ধ পাগুলোর জন্য।
জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ বালখী ৫৭ বছর বয়সে ১২৭৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর কোনিয়ায় মারা যান। তাকে তার পিতার কাছে সমাহিত করা হয় এবং যেটি একটি চমকপ্রদ ঘর, “ইয়াসিল তুর্ব”(সবুজ সমাধি, قبه الخضراء; যা বর্তমানে মাওলানা মিউজিয়াম), তার কবরের উপর দাঁড়িয়ে আছে। তার সমাধিফলকে লেখাঃ
যখন আমি মৃত, পৃথিবীতে আমার সমাধি না খুঁজে, আমাকে মানুষের হৃদয়ে খুঁজে নাও।
রুমির ইন্তেকালের কিছু দিনের মধ্যে স্থপতি তারবিজ বাদর আল-দীনের তত্ত্বাবধায়নে এবং সোলাইমান ফারওয়ানা’র স্বামী, বাদশাহ সালজুকি ও রুমির ছেলের আর্থিক সহায়তায় মাযার নির্মাণ করা হয়। এই মাযারের গম্বুজ সবুজ ও ফিরোজা টাইলস দিয়ে সাজানো হয়েছে। দীর্ঘ দিন যাবত সবুজ গম্বুজ হিসেবে পরিচিত ছিল। এছাড়াও গম্বুজের চারপাশে গাড় নীল রঙ্গ দিয়ে “বিসমিল্লাহ” ও “আয়াতুল কুরসি” লেখা রয়েছে। গম্বুজের উপর সোনার একটি চাঁদ ও তারা লাগানো হয়েছে। ১৩ শতকের মাওলানা মিউজিয়ামসহ তার মসজিদ, থাকার জায়গা এবং  বিদ্যালয় দেখতে আজকেও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিম-অমুসলিমরা ছুটে যান। জালাল উদ্দিন যিনি রুমি নামে পরিচিত, তিনি ছিলেন ইসলামের একজন দার্শনিক এবং মরমী। তার উপদেশ সমর্থন করে ভালবাসার মাধ্যমে অসীম পরমতসহিষ্ণুতা, ইতিবাচক যুক্তি, ধার্মিকতা, দানশীলতা এবং সচেতনতা।                                    

captcha